আয়না ঘর নিয়ে আমাদের যেন প্রশ্নের শেষ নেই –
শেখ হাসিনার পতনের পর ‘আয়নাঘর’ আবার আলোচনায় উঠে এসেছে। সেখান থেকে ইতোপূর্বে তিনজন বন্দি মুক্তি পেয়েছেন। ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত সেই কুঠুরিতে বছরের পর বছর মানুষকে আটকে রেখে ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর নির্যাতন করার অভিযোগ রয়েছে।
আয়নাঘর বা বন্দীশালায় কি ঘটে …?
এসব বন্দীশালায় বিভিন্ন সময়ে গুমের শিকার রাজনৈতিক কর্মী, সংগঠক ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের দীর্ঘদিন বন্দী রেখে নির্যাতন করা হতো। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে র্যাব নাশকতা বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অভিযান ব্লক রেইড বা জঙ্গী অভিযান পরিচালনা করতো তখন বন্দীশালা বা আয়নাঘর থেকে বন্দীদের নিয়ে সাজাতেন এরা নাশকতা বা সহিংসতা করেছে।
এছাড়া এদের জঙ্গী হামলা বা নাশকতা করার টার্গেট ছিল। আবার অনেককে এখান থেকে উঠিয়ে নিয়ে ক্রসফায়ার সাজানো হতো। বিভিন্ন সময়ে র্যাবে দায়িত্ব পালন করা একাধিক কর্মকর্তা র্যাবের এই আয়নঘরের তথ্য জানিয়েছেন। তাদের মতে, র্যাবের এই আয়না ঘরেও নিরপরাধ ও গুমের শিকার অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তি রয়েছেন।
২০২২ সালের আগস্টে ‘আয়নাঘর’ শব্দটি নেত্র নিউজে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে বিষয়টি জাতির সামনে আসে। রাষ্ট্রীয়ভাবে গুমের শিকার রাজনৈতিক কর্মী, সংগঠক ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সদরদপ্তরের একটি ঘরে আটকে রাখা হয়। ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত সেই কুঠুরিতে বছরের পর বছর মানুষকে আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ রয়েছে। তাদের মধ্য অনেকে এই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বন্দীশালায় অবস্থানরত মারা যায় । যাদের সন্ধান এখন অব্দি পরিবার পর্যন্ত পৌছায় নি !!
🔔 বাংলাদেশে সদ্য পলায়ন করা শেখ হাসিনা বিরুদ্ধ মত সহ্য করতে পারছিলেন না। আর সেই কারণে রাজনৈতিক বন্দিদের জন্য তৈরি করেছিলেন আয়না ঘর। যা ছিল রাজনৈতিক বন্দিদের কাছে ত্রাস বা বিভীষিকাময়। হাসিনার তৈরি বিরুদ্ধ রাজনৈতিক কর্মীদের গুমঘর। প্রতিবাদীদের কণ্ঠরোধ করার একটি উপায়। সারাদেশে ডিজিএফআই’র ২৩টি গোপন আটক কেন্দ্র রয়েছে। যার মধ্যে কয়েকটি রয়েছে ঢাকায়। ২০২৪ সালের হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্ট অনুযায়ী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার বছর, ২০০৯ সাল থেকে তার পতন পর্যন্ত বাংলাদেশে ৬০০টিরও বেশি গুম হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী আয়নাঘর থেকে খুব কম বন্দি মুক্তি পেয়েছে। তবে কিছু বন্দিকে দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুক্তি দেওয়া হয়। অনেকেই আবার এনকাউন্টারের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশে এজাতীয় ঘটনার তদন্ত প্রায় হয় নি বললেই চলে। আয়নাঘরে রাখা অনেকেই দিনের পর দিন অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মারা যায়।
তারপর লাশ সরিয়ে দেওয়া হয়। যাদের গ্রেফতার করা হয় তাদের খাতা কলমে কোনও তথ্য রাখা হয় না। আর যারা হাসিনার আস্থাভাজন ছিলেন তারাই আয়নাঘরের দায়িত্ব পেতেন। আয়নাঘরের বন্দিদের সঙ্গে তাদের পরিবারের সদস্যদের দেখা করা বা যোগাযোগের কোনও আইন ছিল না।